অনেকেই প্রায়শই বলতে শুনি, বাংলাদেশ থেকে গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট দিচ্ছে না, কিংবা ৬ মাসের আগে গুগল অ্যাডসেন্সে আবেদন করা যায় না। এসব কথা গুলি কেবলই
বানোয়াট এবং ভুল ব্যাখ্যা, গুগলের বর্তমান নীতিমালায়
এমন কথা কোথাও নেই। আমাদের দেশের বেশির ভাগ নতুন ব্লগারদের ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা অ্যাডসেন্স প্রদত্ত
শর্তগুলি পূরণ না করেই আবেদন করেন। অনেকেই আবার অন্য সাইট থেকে কনটেন্ট কপি করে ব্লগে পেস্ট করে
কিংবা পাইরেট কিছু নিয়ে লিখে (যেমন গেমস ডাউনলোড, মুভি ডাউনলোড) অথবা কে কেউ কপি রাইট করা অন্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখে তারপর অ্যাডসেন্স
এ আবেদন করে। আর এজন্যই তাদের অ্যাডসেন্স কখনোই আপ্প্রুভ হয় না। এবং তখনই তাদের মনে হয় অ্যাডসেন্স সোনার হরিণ। কিন্তু অ্যাডসেন্স
সোনার হরিণ নয়। আপনি অ্যাডসেন্স এর শর্তগুলো মেনে তার পর আবেদন করুন যদি সবকিছু ঠিক ঠাক থাকে তাহলে
আপনার অ্যাডসেন্স আবেদন করার ৪/৫ দিনের মধ্যেই আপ্প্রুভ হবেই। মনে রাখবেন, আপনার সাইটটি অবশ্যই ভালো মানের এবং ইনফরমেশন রিচ হতে হবে।
আসুন আজ আমরা জেনে নেই গুগল অ্যাডসেন্সের
এপ্রুভাল পাওয়ার জন্য কি কি ব্যাপার গুলো অবশ্য আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
আবেদনের পূর্বে যে শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:
১। কন্টেন্ট এর ধরন: অ্যাডসেন্স এ এপ্লাই করার পূর্বে সবসময় খেয়াল
রাখবেন আপনি কি ধরনের কনটেন্ট প্রকাশ করছেন। অবশ্যই কন্টেন্ট হতে হবে কপি পেস্ট বিহীন, কপি রাইট মুক্ত অথবা পাইরেট কিছু ন্য এমন বিষয় নিয়ে। এসব করে কক্ষনোই অ্যাডসেন্স
একাউন্ট পাওয়া সম্ভব নয় কারন অ্যাডসেন্স অরিজিনাল কন্টেন্ট বিহীন সাইটে এড শো করতে
চায়না। আমরা কন্টেন্ট লিখি
ইউজারের জন্য যা সব সময় সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি হতে হয়। আরও কিছু জিনিস আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে
কোন ক্রমেই সাইটে কপিরাইট ছবি ব্যবহার না করেন এটা ওদের নীতিমালা বিরোধী। এছাড়া পর্নোগ্রাফি,
হ্যাকিং-ক্রাকিং, গেম্বলিং বা
অবৈধ কিছু নিয়ে লেখা আর্টিকেল সাইটে পাবলিশ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সাভাবিক নিয়মে ব্লগ
কন্টেন্ট লিখুন তাহলেই সম্ভব দ্রুত এপ্রুভাল পাওয়া।
২। কোয়ালিটি রিসোর্স কনেন্টঃ
ওয়েবে আপনি লিখছেন, ইউজারকে সেটিসফাই করার জন্য। এটা ত মানেন? অবশ্যই লেখা গুলো হতে হবে ইনফরমেটিভ এবং সঠিক। আপনার কন্টেন্ট গুলো তখনি কোয়ালিটি হবে যখন
ইউজারের জন্য বিবেচনায় রেখে ওয়েল রিসার্সড রিসোর্স তৈরি করবেন। ইউজার পড়ে মজা পাবেনা,
তাদের লাগবে না এমন কন্টেন্ট কখনোই ভালো অবস্থা তৈরি সহায়ক হবে
না। অ্যাডসেন্স পাওয়া জন্য
লিংবা আবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ক্রাইটেরিয়া হচ্ছে কোয়ালিটি রিসোর্স কন্টেন্ট, তাই সর্ব প্রথম এই বিষয়ে নজর দিতে হবে।
৩। সাইটের ডিজাইন এবং ন্যাভিগেশনঃ
সাইটের ডিজাইনটি অনেক গুরুত্তপুর্ণ। আপনার সাইটের ডিজাইন
আপনার দক্ষতার প্রমান রাখে সুতরাং আপনার সাইট টিকে এমন ভাবে ডিজাইন করুন যাতে করে মনে
হয় না সাইটি অনেক নতুন এবং এখনো কাজ চলছে তার মানে Under Construction। গুগল কক্ষনো আন্ডার
কন্সট্রাকশন সাইটে অ্যাডসেন্সের এপ্রুভাল দেয়না। উৎকট কালার এবং অতিরিক্ত কালারফুল ব্যাকগ্রাউন্ড
দিয়ে ডিজাইন করা সাইটের ৯০% ই এপ্রুভাল পায় না, তাই এসব ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। এছাড়াও সাইটের ন্যাভিগেশন লেভেলও ইজি হতে হয় আবার সাইটের পেজ
ও লিংক স্ট্রাকচারও হতে হবে অবশ্যই স্টান্ডার্ড। মনে রাখবেন, উদ্ভট কালারের কোন ব্যানার থাকলে সে গুলোও সরিয়ে নিন আপাতত, তারপর আবেদন করবেন।
৪। গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেজ তৈরিঃ
ক) Privacy Policy পাতাঃ এটা একটা খুবই সাধারন ভুল যেটি সকলেই করে থাকে। গুগল একটি সাইটের Privacy Policy কে অনেক গুরুত্ত দেয়। Privacy
Policy মূলত আপনার সাইটের ভিসিটর এবং পাঠকদের কি করা উচিত এবং কি উচিত
নয়, আপনার ব্লগে তারা কি কি পাবে এবং আপনি আপনার ব্লগটিকে কিভাবে
ব্যবহার করেন সেটি আলোচনা করে। তাই সাধারণ ভাবে একটি Privacy Policy পাতা থাকা জরুরী। নিজেই আপনি ব্লগের
Privacy Policy পাতা তৈরি করে নিতে পারেন সেক্ষেত্রে কিছু
সাইটের Privacy Policy পাতা গুলো পড়ে নিন
কি বা কিভাবে লিখতে হবে বুঝার জন্য।
খ) About Us পাতাঃ About Us পাতাটিও আপনার সাইটে অ্যাডসেন্স আপ্প্রুভাল
পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্তপূর্ণ। আপনি যদি এই পাতাটি তৈরি না করে অ্যাডসেন্স এর আবেদন করেন তাহলে
আপনার অ্যাডসেন্স আপ্প্রুভ হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। About Us পাতাটি মুলত আপনা বা আপনার সাইটের সম্পর্কে
আলোচনা করে। কিভাবে সাইটা শুরু হল, কে বা কারা এই সাইটি
দেখাশোনা করে এবং সাইটি কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এসব তথ্য About Us পাতার মূল উপাদান। এজন্য অ্যাডসেন্স এ আবেদনের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই একটি About
Us পাতা তৈরি করে নিতে হবে। কয়েকটি সাইট ভিজিট করে তাদের এবাউট আস পাতাটি
পড়ে নিয়ে লিখা শুরু করে দিন।
গ) Contact Us পাতাঃ Contact Us পাতা মুলত আপনার ভিসিটর এবং পাঠকদেরকে আপনার
সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেয়। Contact
Us পেজের মাধ্যমে আপনার পাঠকেরা আপনার সাহায়্য পায় তার মানে আপনি
আপনার ভিসিটর ও পাঠকদের কেয়ার (Care) করেন যেটা অ্যাডসেন্স
পছন্দ করে। তাই আবশ্যই আপনার সাইটে একটি Contact Us পাতা তৈরি করবেন।
৫। অন্যান্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কঃ
এটা অনেক গুরুত্তপুর্ন একটি বিষয়। অ্যাডসেন্স এবং ক্লিকসর
একসাথে ব্যাবহার করা যায় না, কারন ক্লিকসর কনটেক্সচুয়াল
এড যেটা এডসেন্স এর টার্মস বিরোধী। ইয়াহুর ব্যাপারটাও সেম। তাই অ্যাডসেন্সে এপ্লাই করতে হলে আপনাকে অবশ্য
এই ধরণের এড গুলো সাইট থেকে রিমুভ করে নিতে হবে। যতদূর অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে ইয়াহু
অথবা ক্লিকসর এডসেন্সের সাথে বসালে এমনিতেই এডসেন্স ব্যান হয়ে যাবার কথা। আর এডব্রাইট এবং বিডভার্টাইজার
ব্যাবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা উচিৎ। এফিলিয়েট লিংক থাকলে সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিৎ,
আমি মনে করি আবেদনের পূর্বে রিস্ক ফ্রি থাকার জন্য জাস্ট লিংক
গুলো উঠিয়ে রেখে এপ্লাই করা ব্যাটার হবে।
৬। টপ লেভেল ডোমেইনঃ
ব্লগস্পট ডট কম দিয়ে অ্যাডসেন্স পাওয়ার দিন
শেষই বলতে হবে। আমি বলছি না ওরা এপ্রুভাল দিবেনা, তবে একটা সময়
ছিলো যখন হয়তো খুব সহজেই সাব ডোমেইন গুলো দিয়ে এপ্লাই করেই এডসেন্স পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আপনাকে
এই নীতি চেঞ্জ করতে হবে কারন এখন সাব দমেইন/ব্লগ গুলোকে প্রায় স্পামি ভাবে। এখন দ্রুত অ্যাডসেন্স
আপ্রুভাল পেতে হলে আপনার ব্লগটি অবশ্যই টপ লেভেল ডোমেইন হতে হবে যেমন com,
net, org ইত্যাদি। যারা ব্লগস্পট বা সাব ডোমেইন দিয়ে অ্যাডসেন্স পাওয়ার স্বপ্ন
দেখছিলেন তারা এখনি একটি টপ লেভেল ডোমেইন কিনে ফেলুন এটা অনেক ট্রাস্টেড অফশন হবে আপনার
জন্য। ভিজিটরদের ভালো রেসপন্স
পাওয়ার জন্যও টপ লেভেল ডোমেইন অত্যাবশ্যক।
৭। আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
অ্যাডসেন্স এ আবেদন করার জন্য সর্বনিম্ন কতটি
পোস্ট থাকতে হবে এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোন উত্তর নেই। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলবো অবশ্যই ২০-২৫
টি অরিজিনাল কন্টেন্ট দিয়ে নিবেন এবং যেগুলোর ওয়ার্ড লিমিট নিয়ে খুব বেশি না ভাবলেও
ইউজার যাতে ঐ বিষয়ের সম্পূর্ণ wh question সেই লেখা থেকেই
পায়, সুতরাং এসব লিখতে যতটুকু লিখতে হয় লিখবেন। তবে মনে রাখবেন সর্বনিম্ন
২৮০-৩০০ ওয়ার্ডের নিচে জেনো না হয়।
সাইটের বয়স বাড়তে দিন, আজকে সাইট খুলেই ১০/১২ টা লেখা দিলেন আর এপ্লাই করে ফেললেন সাথে
এপ্রুভাল পাবেন এমন ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসুন। কারণ অপরিপক্ক মা থেকে যেমন বাচ্চা আশা করা যায় না, তেমন ই অপরিপক্ক সাইট থেকেও ভালো রেজাল্ট আশা করা বোকামি। সাইটের এজ প্রায়শই
অনেক বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
পোষ্ট গুলো লিখার সময় টপিক্স রিলেটেড মোটামুটি
ভালো সিপিস আছে ও হাই কম্পিটেটিভ (এডওয়ার্ড অনুযায়ী) কিয়ার্ড টার্গেট করে পোষ্ট লিখবেন
এতে করে গুগল আপনার সাইটে এড দিতে বেশ আগ্রহী হবে, এবং দ্রুত অ্যাডসেন্সের এপ্রুভাল পাওয়া যাবে।
গুগল অ্যাডসেন্সে আপ্লাই করার পূর্বে অবশ্যই
সব গুলো পোষ্ট যাতে সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পোষ্ট গুলোকে নিয়মিত
সোশ্যাল মিডিয়া (বিশেষ করে গুগল প্লাস, টুইটার,
ফেসবুক, স্টাম্বল, রেডিট, ফেসবুক, লিংকদিন ইত্যাদি ) এবং বুকমার্ক সাইট গুলোতে শেয়ার করতে হবে। এতে করে সাইটে ট্রাফিকও
বেড়ে যাবে দিন দিন।
পোষ্টে অতিরিক্ত কিওয়ার্ড ইউজ করে স্টাফিং
করা যাবেনা। একটা টার্গেটেড পেজের জন্য প্রাইমারি কিওয়ার্ড বাদে বাকি ৩ (মেক্স) টা সেকেন্ডারি
কিওয়ার্ড টার্গেট করবেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মেটা কিওয়ার্ড নিয়ে না ভাবলেও চলবে।
সেম ইন্টেনশনের ভিন্ন ভিন্ন কিওয়ার্ড ফ্রেস
টার্গেট করে লিখা যাবে না (যেমন good antivirus এবং best antivirus অনেকক্ষেত্রেই সেম
ইন্টেন্ট এর। অনেকেই হয়তো সিপিসি দেখে দুইটা নিয়ে আলাদা আলাদা লেখা পাবলিশ হবে) এতে ক্যানিনিবালাইজশেন
প্রবলেমে পরবেন।
ভিজিটর নাই এমন সাইটে নিশ্চই গুগল অ্যাড বাসাতে
আগ্রহি হবে না, মোটা কথা, সাইটে ভিজিটর বাড়ীয়ে নিন তারপর আবেদন করুন।
0 comments:
Post a Comment